শনিবার, ২ মে, ২০২০

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ভালবাসার সময় তো নেই

ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।
ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।
কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।
নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।
তোমার দিকে ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।

খুব কাছে এসো না

খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।

দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা 

আমার এখন সমস্তটাই স্মৃতিসৌধ,
হৃৎপিন্ডে পিন ফোটানো
কালো ব্যাজের মৌন বিষাদ,
একুশে ভোর, নগ্ন পায়ে শহীদ মিনার,
আমার এখন সমস্তটুক্ এক মিনিটের নীরবতা।
দু’চোখ বেয়ে রাত্রি ঝরে, পাংশুটে রাত,
রক্তমাখা চাঁদের দেহে জোৎস্না উধাও,
উল্টে পড়ে রোদের বাটি,
আমার এখন আকাশ জুড়ে দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা।
উঠোনে সাপ
অবিশ্বাসের ভীষণ কালো রক্তজবা,
লকলকে জিভ,
এখন আমার সমস্তটাই লখিন্দরের লোহার বাসর।
আঙুলগুলো ঝ’রে পড়ছে হাত থেকে ফুল,
ঘরের পাশে লক্ষèীপ্যাঁচার ধাতব গলা,
আমার এখন শঙ্খচিলের কান্নাভেজা দুপুরবেলা,
শূন্য খা-খা একাকী মাঠ,
ঘাসের ডগায় নীল ফড়িং-এর নিমগ্নতা।
আমার এখন হৃদয় শুধু হৃদয় বোলে
দু’হাত মেলে চাতক পাখি…
আমার এখন বুকের ভেতর
কবর শুধু কবর খোঁড়ার ভারি শব্দ।
দু’চোখ বেয়ে সকাল ঝরে, উল্টে পড়ে স্বপ্নবাটি।
আমার এখন নিজের মধ্যে নিজের কফিন,
সমস্ত রাত করাতকলের কষ্টধ্বনি-
এখন আমার সমস্তটাই পিরামিডের মগ্ন মমি।

উল্টো ঘুড়ি

এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন!
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-
দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার
বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?
সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি,
সহজে ভুলিনা কিছু-
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।
সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-
সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
আমি দূরে যাই-
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-
চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন
বেদনার বেনোজলে…
এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?