সোমবার, ৪ মে, ২০২০

ফরিদ কবির

পাথর অথবা জল 
পাথর পড়েছে জলে? নাকি, জল পাথরে পড়েছে?
এই নিয়ে দ্বিধায় পড়েছো
তোমার মগজবৃন্তে গেঁথে আছে পতনের দাগ
চারপাশে কোলাহল করে তিন শো তেরোটি শব্দ
তোমার দ্বিধায় তবু পানি ও পাথর…
কে কোথায় গড়িয়ে পড়েছে- এটা নিয়ে
ধর্মসভা কিছুই বলেনি
জল আর পাথরের মাঝখানে কেউ
টেনে দিয়েছিলো লাল বাতাসের পর্দা
পাথর অথবা জল পতনের শব্দ
তবু শোনা গেলো দূরে, অথবা নিকটে, এই ঘরে
পাথর পড়েছে জলে? নাকি, জল পাথরে পড়েছে?
এইসব দ্বিধার জঙ্গলে 
তোর বাগানের মুখ ভালো করে দেখাই যাচ্ছে না!

ট্রেন
ট্রেন আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল
মাঝপথে, অচেনা স্টেশনে
মানুষ যেখানে যেতে চায় সেটাই কি গন্তব্য?
নাকি, তারা যেখানে নামে?
নাকি, গন্তব্যই খুঁজে নেয় তার নিজস্ব মানুষ!
বিহ্বল স্টেশনে নেমে আমরাও ভাবি—
এখানেই কি নামতে চেয়েছি
নাকি, ট্রেনই নামিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের
….             ….   এই ঘন কুয়াশারাত্রিতে!
যেখানে নেমেছি, কিংবা যেখানে যাওয়ার কথা ছিল
কিছুই আসলে সত্য নয়
আমাদের চোখের সামনে শুধু ছবি হয়ে থাকে
…..           ….            ….            ….         …ট্রেনের জানালা
আর, খুব দ্রুত ছুটে চলা যমুনা ব্রিজ…
সাপ-লুডু
সাপ-লুডু বেশ বিপজ্জনক!
খেলতে গেলেই দেখি, সাপগুলি জ্যান্ত হয়ে যায়
ছোবলের ভয়ে আমি লুডুর এ-ঘর থেকে অন্য ঘরে
ক্রমাগত ছুটতে থাকি!
ওপরে যাওয়ার জন্য মইগুলি খুঁজি
একটু আগেও পড়ে ছিল, যত্রতত্র
কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ একজন
সিঁড়িগুলি সরিয়ে ফেলেছো
আমি যে ধরবো, নেই তেমন একটা হাতও
অথচ পাশেই ছিলে তুমি
অথবা তোমার মতো অন্য কেউ!
সাপগুলি আস্তে আস্তে ঘিরে ফেলেছে চারপাশ থেকে
আর, আমি ছোবল খাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকি…
গণিত
গণিত বড়ই রহস্যময়
শেখায় দুয়ে দুয়ে চার…
কিন্তু বাস্তবে এ হিসাব কখনো মেলে না
দুয়ে দুয়ে ২, ৩ এমনকি
৫ কিংবা ৭ হয়
৪ কিছুতেই নয়
কী কী বর্ণ যোগ অথবা বিয়োগ করলে
অঙ্কটা মিলবে, জানা নাই
আমি দুয়ের সঙ্গে ২ যোগ করি, ৩ যোগ করি
লাল এমনকি নীল যোগ করি
তুমি দুই থেকে দুঃখ বিয়োগ করেও পাও ৫ অথবা ৭
আমি দুয়ের সঙ্গে তোমাকে যোগ করেও ২ অথবা ৩
বিয়োগ করলেও তোমার যোগফল মেলে
আমি যোগ করলেও বিয়োগফল
আমি দুয়ে দুয়ে পাই ২ বা ৩
তুমি ৫, ৭ কিংবা ৯
একথা তো আজ বলতেই পারো
দুয়ে দুয়ে তুমিও চারই চেয়েছিলে
৫, ৭, ৯—কিছুতেই নয়…
পাতা
গাছের নিঃশ্বাস আটকে আছে
আজ তার মৃত্যু ঠেকাবে কে?
সমস্ত শরীর তার কেঁপে উঠছে পাতার সন্ত্রাসে!
তাকে ঘিরে আছ তুমি চারপাশ থেকে
শুষে নিচ্ছ রোদের উত্তাপ
তীব্র ঝড়ও থমকে গেছে তোমার ইঙ্গিতে
এখন বুঝতে পারি, গাছ নয়, পাতাই আসল
সমস্ত গাছের নাম লেখা আছে পাতার সবুজে
ধান
যে-কোনো সমুদ্র থেকে ধানক্ষেত জেনো—
অধিক তরঙ্গময়
তার নিচে থাকে সন্তরণশীল বীজ
আর, পর্দা খুলে দেখো—বীজের ভিতরে
তোমার জীবন আর স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ বইছে সেখানে
তুমিও নদীর মতো হিংস্র, কিছুটা ভাঙনপ্রিয়
এখন নির্মাণ ফেলে তুমি লিপ্ত মানবসংহারে
শোনো বলি, তোমাদের জন্য নয় উদ্ভিদসকল
ধানের চর্যাই জেনো—তোমার নিয়তি
ঘ্রাণ
তোমার ঘ্রাণেও আছে আলাদা সৌন্দর্য
সামান্য কথার পর সমুদ্র-দূরত্বও যেন নিমিষে উধাও
আর, সেই ঘ্রাণ এসে মিশে যায় আমার শরীরে
দ্বৈত গন্ধ নিয়ে আমি উন্মাতাল
যেন এইমাত্র শেষ হলো সম্পূর্ণ সঙ্গম
তোমার রঙিন ঘ্রাণ টের পায় এত দূরে গাছের পাতাও
আজ বুঝি—রূপে নয়, ঘ্রাণে আছে সকল রহস্য
এর টানে ফুলের কাছেই
বারবার ফিরে যায় সকল মৌমাছি
নিজেকেও মৌমাছি বলেই মনে হচ্ছে আজ
ঘ্রাণ থেকে খুলে নিচ্ছি অসামান্য মধু…