অমলকান্তি
অমলকান্তি আমার বন্ধু,
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।
আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
মাঠের সন্ধ্যা
অন্যমনে যেতে যেতে হঠাৎ যদি
মাঠের মধ্যে দাঁড়াই,
হঠাৎ যদি তাকাই পিছন দিকে,
হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে বিকেলবেলার নদীটিকে।
মাঠের মধ্যে দাঁড়াই,
হঠাৎ যদি তাকাই পিছন দিকে,
হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে বিকেলবেলার নদীটিকে।
ও নদী, ও রহস্যময় নদী,
অন্ধকারে হারিয়ে যাসনে, একটু দাঁড়া;
এই যে একটু-একটু আলো, এই যে ছায়া ফিকে-ফিকে,
এরই মধ্যে দেখে নেব সন্ধ্যাবেলার প্রথম তারাটিকে।
অন্ধকারে হারিয়ে যাসনে, একটু দাঁড়া;
এই যে একটু-একটু আলো, এই যে ছায়া ফিকে-ফিকে,
এরই মধ্যে দেখে নেব সন্ধ্যাবেলার প্রথম তারাটিকে।
ও তারা, ও রহস্যময় তারা,
একটু আলো জ্বালিয়ে ধর, দেখে রাখি
আকাশী কোন্ বিষণ্ণতা ছড়িয়ে যায় দিকে-দিকে,
দেখে রাখি অন্ধকারে উড়ন্ত ওই ক্লান্ত পাখিটিকে।
একটু আলো জ্বালিয়ে ধর, দেখে রাখি
আকাশী কোন্ বিষণ্ণতা ছড়িয়ে যায় দিকে-দিকে,
দেখে রাখি অন্ধকারে উড়ন্ত ওই ক্লান্ত পাখিটিকে।
ও পাখি, ও রহস্যময় পাখি।
হারিয়ে গেল আকাশ-মাটি, কান্না-পাওয়া
এ কী করুণ সন্ধ্যা! এ কোন্ হাওয়া লেগে
অন্ধকারে অদৃশ্য ওই নদীর দুঃখ হঠাৎ উঠল জেগে।
ও হাওয়া, ও রহস্যময় হাওয়া!
হারিয়ে গেল আকাশ-মাটি, কান্না-পাওয়া
এ কী করুণ সন্ধ্যা! এ কোন্ হাওয়া লেগে
অন্ধকারে অদৃশ্য ওই নদীর দুঃখ হঠাৎ উঠল জেগে।
ও হাওয়া, ও রহস্যময় হাওয়া!
আকাশ-বার্তা
শুভ সংবাদ লোক মারফত আসবে ভেবে
সন্ধ্যা রাত থেকে
হাত দুখানা মাথার পিছনে রেখে
এতক্ষণ তুমি।
স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন, এবারে।
দরজায় টোকা পড়তেই সেই মানুষটি
ঘর ছেড়ে।
বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। কিন্তু না,
কোন জন মনীষী তার
চোখে পড়ে না।
তার বদলে যা দেখেন, তাতেই যেন
চোখ জুড়িয়ে যায়।
সন্ধ্যা রাত থেকে
হাত দুখানা মাথার পিছনে রেখে
এতক্ষণ তুমি।
স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন, এবারে।
দরজায় টোকা পড়তেই সেই মানুষটি
ঘর ছেড়ে।
বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। কিন্তু না,
কোন জন মনীষী তার
চোখে পড়ে না।
তার বদলে যা দেখেন, তাতেই যেন
চোখ জুড়িয়ে যায়।
কী দেখেন তিনি? না আষাঢ় মাসের আকাশ জুড়ে
সারাটা দিন যে ছিচকাঁদুনে।
মেঘের জটলা চলছে, তাকে।
ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে এখন মস্ত একটা
চাদ উঠেছে, আর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তার
দুগ্ধফেননিভ শুভ্র জ্যোৎস্না ধারা।।
সারাটা দিন যে ছিচকাঁদুনে।
মেঘের জটলা চলছে, তাকে।
ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে এখন মস্ত একটা
চাদ উঠেছে, আর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তার
দুগ্ধফেননিভ শুভ্র জ্যোৎস্না ধারা।।
দেখে তিনি বোঝেন যে, শুভ সংবাদ
লোক মারফত নয়, সরাসরি।
আকাশ থেকে আসার কথা ছিল, আর ঠিক
তাই এসেছে।
লোক মারফত নয়, সরাসরি।
আকাশ থেকে আসার কথা ছিল, আর ঠিক
তাই এসেছে।