সোমবার, ৪ মে, ২০২০

তারাপদ রায়

একজন্ম

অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দুজনেই দুজনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বত্সরের পর বত্সর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।

স্মাইল প্লিজ 

স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,
দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলে
আপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,
তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকে
আর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেন
ঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো হ্যাবিট নেই, তবে,
কি বলছেন অনেকদিন, অনেকদিন হাসার অভ্যাস,
হাসার-ও অভ্যাস নেই? এদিকে যে রোদ পড়ে এলো
এ রকম ঘাড়গোঁজা বিমর্ষ মুখের একদল
মানুষের গ্রুপফটো, ফটো অনেকদিন থেকে যায়,
ব্রমাইড জ্বলে যেতে প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর।
বিশ-পঁচিশ বছর পরে যদি কোনো পুরোনো দেয়ালে
কিংবা কোনো অ্যালবামে এরকম ফটো কেউ দেখে,
কি বলবেন, বলবেন, ক্যামেরাম্যানের ত্রুটি ছিলো,
ঘাড় ঠিকই সোজা ছিলো, সব শালা ক্যামেরাম্যানের
সেই এক বোকার শাটারে এই রকম ঘটেছে।

দু-চার বছর 

মাঝে মধ্যে দেখা হবে। মাঝে মধ্যে চোখের আড়ালে
দু-চার বছর কিংবা ধরো সেই জীবনানন্দের
জীবন গিয়েছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার ;
এইভাবে ঝরা পাতা, হেমন্তের নরম বাতাস
কিছু বৃষ্টি, কুয়াশা ও জল, কিংবা জলের মতন
চলে যাবে দিন ও সময়, সময় ও ভালোবাসা।
ভালোবাসা? হয়তো বা কোনোদিন তবুও যাবে না,
দু-চার বছর কিংবা তারো পরে হঠাৎ হঠাৎ
দেখা হবে, ঢেউয়ের শব্দের মতো বুকের ভিতরে
এক স্বচ্ছ করতোয়া, অবলীলাক্রমে তার জলে
ভেসে গেছে আমাদের তোমাদের আমার তোমার
কথাবার্তা দিন রাত্রি, তবু আজো দু-চার বছর।
দু-চার বছর বাদে একদিন দেখা হয়ে যাবে,
দু-চার বছর বাদে একদিন দেখা হয়ে যায়।